টেলিমেডিসিন এক ধরনের চিকিৎসা সেবা। দূর থেকে রোগীরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে অতিদ্রুত চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে পারেন এর মাধ্যমে। টেলিফোন, মোবাইল, ভিডিও কনফারেন্স বা অনলাইনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার এই প্রক্রিয়াটি হলো টেলিমেডিসিন।
খুব সময়পোযোগী ছিল এই প্রযুক্তিটির ব্যবহার। মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা অপরিহার্য। তাই চিকিৎসকরা এই মহামারী থেকে বাঁচতে চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় সময়ের প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবায় নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা হলো টেলিমেডিসিন সেবা। এই টেলিমেডিসিন সেবা হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগী দেখা এবং রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেয়া। করোনাই মূলত এই পথ দেখিয়েছে।
করোনাভাইরাসের ক্রান্তিকালে দেশে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্যসেবা বা টেলিমেডিসিন ব্যবহারের চাহিদা তীব্রভাবে বেড়েছে। সরকারিভাবে চালু করা টেলিমেডিসিন সেবায় প্রথম দিকে ৫ হাজার কল আসলেও প্রতিদিনই তা বাড়ে। এখন তা লাখ ছাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরাও সংক্রমণ হতে পারে বা সম্ভাবনা আছে এমন জায়গায় থাকতে চায় না। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে টেলিমেডিসিন সেবা পদ্ধতি চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য একটি সহজ সমাধান। এছাড়া করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে এটা একটি সফল মাধ্যম। একই সঙ্গে এটা শুধু বর্তমানই নয়; ভবিষ্যতেও এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কী ভাবে নিবেন টেলিমেডিসিনের সেবা?
চিকিৎসা ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের প্রচলন মোটামুটি নতুন এবং আধুনিক একটি ধারণা। এখানে ডাক্তাররা টেলিভিশন স্ক্রিন এবং ক্যামেরার সামনে বসে দূর-দুরান্তের রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এই পদ্ধতি চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্য সহজ সমাধান।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে অসুস্থ রোগীরা এখন গ্রামে বসেই রাজধানীর বড় বড় ডাক্তারদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন। প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের সঙ্গে রোগী কথা বলতে পারবেন, সমস্যাগুলো দেখাতেও পারবেন। পুরনো রোগীরা তাদের প্রেসক্রিপশন হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবারের পাঠিয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞের নতুন পরামর্শ নিতে পারবেন।
শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সুবিধাগুলো গ্রহণ করা যাচ্ছে। এর ফলে কোন রোগীকে আর হাজার হাজার টাকা খরচ করে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে না। আবার করোনাভাইরাসের ঝুঁকিও এড়ানো যাচ্ছে।
এটি ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে করা হয়, তাই রোগীকে ক্লিনিকে সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে হবে না। ফলে তারা অন্য লোকের সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পারেন। ভার্চুয়াল এই পদ্ধতি বর্তমান করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে অনেকটা সফল বলে মনে করছেন ডাক্তাররা।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের অধিকাংশ হাসপাতাল এই টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে। এক্ষেত্রে রোগীরা তাদের আগের রিপোর্ট ই-মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপে চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সে প্রয়োজনীয় করণীয় পাচ্ছেন। আবার চিকিৎসকরাও টেলিকনফারেন্সের অ্যাডভাইস ওই রোগীর ই-মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
টেলিমেডিসিনের সেবা সম্পর্কে সাধারন কিছু জিজ্ঞাসা
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার চাপানি বাজারে কথা বলার সময় জিয়াউল ইসলাম নামের একজ বলেন আমি তো এই প্রথম টেলিমেডিসিনের নাম শুনলাম। এই মেডিসিন কোথায় পাব। তখন তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সাজু বাঙালী বলেন মোবাইলে কল করে অসুস্থ রোগীরা এখন গ্রামে বসেই বড় বড় ডাক্তারদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন। তার জন্য কোথাও যেতে হবে না।
তিনি আবার বলেন, কত টাকা খরচ পরবে এই সেবা নিতে? আর কিভাবে টাকা দিবো? কে কে এই চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে?
তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম জিয়াউল ইসলাম কে বলেন, সাড়া টেলিমেডিসিন চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করে। আপনারা সাড়া টেলিমেডিসিনের নম্বরে (09612300900) ফোন করলে কোন টাকা কাটবে না। আর সবাই এই চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে পারবে।
এরপর জিয়াউল ইসলাম বিষন্ন মনে বললেন আমরা তো গরিব মানুষ আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না। এই টেলিমেডিসিন চিকিৎসা সেবা ফ্রী পেলে আমার মত অনেক গরিব মানুষ উপকৃত হবে। আমাদের কথাই তে কেউ শুনে না আবার ফ্রী চিকিৎসা?
তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি রিপন হোসেন বলেন, সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া আমাদের সকলের অধীকার। দেশের সবাই যেন চিকিৎসা সেবা পায় সেই লক্ষে কাজ করছে “সাড়া” টেলিমেডিসিন চিকিৎসা সেবা।
টেলিমেডিসিন সেবা যারা দিচ্ছে-
কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা হুমকির মুখে পড়ে গেছে। এ সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি এবার বাংলাদেশেও সবার জন্য বিনা মূল্যে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল’।
আগ্রহীরা দেশ কিংবা বিদেশের যেকোনো স্থান থেকে যেকোন সময় ‘সাড়া’-এর হটলাইন নম্বর ০৯৬১২৩০০৯০০-এ ফোন করে বিনা মূল্যে এই চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন। রোববার (২৬ জুলাই, ২০২০) সকাল ৮টা থেকেই চালু হয়ে গেছে ‘সাড়া’র এই হটলাইন নম্বর ও টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
‘আমরা দেখছি, আমরা শুনছি, সাড়া দিচ্ছি’ এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলছে সাড়া’র অভিযাত্রা। সাড়া’র উদ্যোক্তাদের মতে, সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বর্তমানে বিশ্বে মানুষ কে যত বেশি ঘরে রাখা যায় ততই নিরাপদ। তাই ঘরে বসেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ থাকায় বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা।বাংলাদেশের মানুষের জন্য টেলিমেডিসিন সেবা নিশ্চিত করতে এবার দেশের স্বেচ্ছাসেবী প্রকৌশলী ও চিকিৎসকেরা এক হয়ে গড়ে তুলেছেন এই প্লাটফর্ম। এদের মধ্যে এক পক্ষ দেবে স্বাস্থ্যসেবা আর অন্য পক্ষ দেবে এই সেবা প্রদান ও প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি।
বর্তমান করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে মানুষ রোগ হলেও হাসাপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে ঘরের বাইরে যেতে। যার ফলে ক্ষুদ্র রোগ গুলো ধীরে ধীরে ব্যাপক আকার ধারন করছে। অন্যদিকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের শহরে এসে চিকিৎসা সেবা পাওয়াটা খুবই দুস্কর হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এই করোনা কালে ঘরে বসেই সর্বক্ষণ চিকিৎসা সেবা পেতে পারে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে সাড়া।
No comments:
Post a Comment