বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে আপনাকে ৩টি শর্ত পূরণ করতেই হবে। আমি এদেরকে
বিসিএস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার ‘রুলস অব থাম (Rules of thumb)’
বলে থাকি।
প্রথম যে শর্তটি পূরণ করতে হবে সেটি হচ্ছে, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাটা জাগিয়ে রাখা।
আমাদের কিশোর বয়সে একটা কথা প্রচলিত ছিল-‘সিনেমা দেখার টাকা ভুতে যোগাড় করে দেয়!’
আসলেই সত্য কথা।
তবে পূর্বশর্ত হচ্ছে, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার তীব্র ইচ্ছাটা থাকা চাই।
বিসিএস
প্রস্তুতি কৌশলের উপর লেখা আমার বই ‘দ্য ক্যাডারঃ বিসিএস পরীক্ষা
প্রস্তুতি কৌশল-শুরু থেকে শেষ’-এ আমি ব্রাজিলিয়ান লেখক ‘পাওলো কোয়েলহো’র’
বিখ্যাত ‘The Alchemist’ গ্রন্থ থেকে একটি কোটেশন ব্যবহার করেছি। কোটেশনটি
এমন-
‘তুমি যদি কোন কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করো, মহাবিশ্বের সবকিছুই ষড়যন্ত্র শুরু করে দেবে তোমাকে সেটি পাইয়ে দিতে’।
তীব্র
আকাঙ্ক্ষা যেকোন অর্জনের পথে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কোন কিছু পাওয়ার
তীব্র আকাঙ্ক্ষা আপনাকে বাধ্য করবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেতে যা যা করা দরকার
তা তা করতে। সেটা রুটিন মেনে পড়াশুনা করা হোক বা হিমালয়ের চূড়ায় উঠার কঠিন
প্রশিক্ষণ নেওয়াই হোক।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলতে সর্বাগ্রে নিজের
আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে। নিজের সামর্থ্যের লেভেলটা সম্পর্কে সম্যক ধারণা
থাকতে হবে, ধারণা থাকতে হবে কোন ধরনের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে এবং
কোন মাত্রার পড়াশুনা করলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়।
আপনার হয়তো
বিসিএস ক্যাডারদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা রেজাল্ট নিয়ে অহেতুক ভুল
ধারণা আছে। প্রথমত, জেনে নিন, সবচেয়ে বেশী বিসিএস ক্যাডার হয় সাধারণত
মধ্যম-মেধাবী পরীক্ষার্থীরা যাদের যেকোন পর্যায়ে একাডেমিক ফলাফল বা সিজিপিএ
মধ্যম মানের বা সাধারণ মানের। স্নাতক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে অনেকেই
বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমার এক ছোটভাই সাধারণ সরকারি কলেজ থেকে পাসকোর্সে
ডিগ্রি পাশ করে তারপর প্রিলি-মাস্টার্স করে বর্তমানে বিসিএস ট্যাক্স
ক্যাডারের মতো ভালো একটি ক্যাডারে চাকরি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
পাশ করে শুধু আমারই ৬জন ছাত্র খুব ভালো ভালো ক্যাডারে চাকরি পেয়েছে।
পররাষ্ট্র,
প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ও কর ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারে আমার ছাত্র,
সাবেক সহকর্মী, ও আত্নীয়স্বজন মিলে প্রায় শখানেক পরিচিত বিসিএস ক্যাডার
কর্মকর্তা আছেন যারা তাদের একাডেমিক পরীক্ষাগুলোতে খুব ভালো রেজাল্ট করেননি
বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়/সাধারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন।
বিসিএস
পরীক্ষার মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১১০০নম্বরের পরীক্ষার উত্তরপত্র
মূল্যায়নের সময় পরীক্ষক বা পিএসসি’র কেউ জানতে পারেন না কোন পরীক্ষার্থীর
রেজাল্ট কী বা কে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছে। ভাইভার ২০০ নম্বরের মধ্যে
যদি আপনাকে অল্প নম্বর দিয়েও পাশ করানো হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৮০
নম্বর (পাশ-মার্কস) দিতে হবে। এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নন-ক্যাডার
প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির অসংখ্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বিধায় লিখিত
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভাতে বাদ পরার সম্ভাবনা কম এবং যেকোনো একটি
বিসিএস ক্যাডার বা নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাকরী পাওয়ার
সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৮০%।
বিসিএস পরীক্ষা টেস্ট ক্রিকেটের মতো।পরীক্ষার
কোনো একটি বা দু’টি বিষয়ে খারাপ করলে অন্যান্য বিষয়ে ভালো করে সফল হওয়ার
সুযোগ আছে। শুধু এটার পেছনে লেগে থাকতে হবে এবং বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রম করতে
হবে। আমি বলে থাকি, ‘Don’t work hard. Work smart and hard’. এটা সত্য যে,
কোনো কিছু পাওয়ার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা থাকলে আপনার সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা
প্রায় শতভাগ। যেকোন অবস্থায়ই নিজেকে Motivated রাখুন। সফলতা আসবেই।
দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে, আপনাকে পরিকল্পিত পরিশ্রম করতে হবে।
চাকরি পেতে পরিশ্রম অনেকেই করে, কিন্তু উপযুক্ত পরিশ্রম ক’জন করে?
অনেকেই একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করেই নিজেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যোগ্য মনে করে।
ভুল।
চাকরির পড়াশুনার সাথে একাডেমিক পড়াশুনার অনেক পার্থক্য আছে। তাই
অনার্স পড়াকালীন একাডেমিক পড়াশুনার ফাঁকেফাঁকে চাকরিপ্রাপ্তির জন্য
প্রস্তুতি নিতে হবে।একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা শুরু
করলে চাকরি পেতে পেতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রায় শেষ হয়ে আসবে।আপনি
যদি একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করার দু’বছরের মধ্যে চাকরি না পান তবে আপনার
মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্বিক শূন্যতা কাজ করবে, এক ধরনের বেদনাবোধ ও
অস্থিরতা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
এই সংকট কাটাতে অনার্স শেষবর্ষ
পরীক্ষা দিয়েই চাকরির পরীক্ষার জন্য কঠিন প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে।
ঠিক করতে হবে আপনার বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতির অব্যর্থ কৌশল। আমি যখন আমার
সিলেট ক্যান্টনমেন্টের আবাসিক কোয়ার্টারের আশেপাশে জগিং করতে যেতাম তখন
সেনাদের প্রশিক্ষণ এলাকায় অবস্থিত একটা পাহাড়ের চূড়ায় খুব বড় করে লেখা একটা
মেটাল-সাইন দেখতে পেতাম। তাতে লেখা ছিল, ‘কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ’।
আসলেই সত্য কথা। কঠিনভাবে প্রস্তুতি নিলে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা সহজ হয়ে যায়। যেকোন প্রতিযোগিতার জন্যই কথাটা প্রযোজ্য।
উক্ত পাহাড়টির পাদদেশের শুটিং রেঞ্জে লেখা ছিল, ‘Shoot to kill’ অর্থাৎ
‘হত্যা করতেই গুলি করো’। আপনাকেও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্যই সিরিয়াসলি
বিসিএস পরীক্ষা দিতে হবে।৬০ভাগ বিসিএস পরীক্ষার্থী অযথাই ক্যাজুয়্যালী
বিসিএস পরীক্ষা দেয়। অনেকে শুধু ভাগ্য বা দৈব’র উপর ভর করেই আধো-প্রস্তুতি
নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিতে যায়। এটা শুধু সময়ের অপচয় মাত্র। অন্তত নিজের
সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া উচিৎ।
এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন যে, আপনি
সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তত চেষ্টাটা করেছেন।
আমার অনেক বন্ধুই ভালো
ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সকল সামর্থ্য থাকলেও আত্ববিশ্বাসহীনতা আর দায়সারা
প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে ক্যাডার সার্ভিসে চাকরি পাননি। অথচ
অসংখ্য সাধারণ মেধার শিক্ষার্থীকে দেখেছি শুধু পরিশ্রম আর লেগে থাকার কারণে
বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বিসিএস পরীক্ষার জন্য
যারা খুব পরিশ্রম করে তারা বিসিএস ক্যাডার হতে না পারলেও অন্য যেকোন প্রথম
বা দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি পেয়ে যায়। বিশ্বাস করুন, যারা বিসিএস
কর্মকর্তা হয়েছেন তাদের অন্তত ৪০ভাগ খুব সাধারণ মানের ছাত্র আর অসাধারণ
পরিশ্রমী ছিলেন।
তৃতীয় শর্তটি হচ্ছে, আপনাকে প্রস্তুতি-কৌশল ঠিক করতে Feasibility Study-তে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে।
আমি
আমার লেখা ‘দ্য ক্যাডার’ বইয়ের ভূমিকার শুরুতেই লিখেছি, ‘প্রতিযোগিতায়
টিকে থাকে তারাই যারা কৌশলী ও পরিশ্রমী’। আপনি যত শক্তিশালী বা মেধাবীই হোন
না কেন, কৌশল ঠিক না করে কোনো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরলে সে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার
সম্ভাবনা ৯৯%, সেটা যত তুচ্ছ যুদ্ধই হোকনা কেন। আপনাকে অবশ্যই বিসিএস
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, সিলেবাস ও আপনার সক্ষমতা স্টাডি করতে হবে।সঠিকভাবে
সঠিক বইটি পড়তে হবে।বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক
পরীক্ষার্থীরই সিস্টেম-লসের কারণে প্রচুর সময়ের অপচয় হয় যা অপূরণীয়।আপনি
যদি ভাবেন, পরীক্ষা দিতে দিতেই প্রস্তুতির কৌশলটা রপ্ত করে ফেলবেন, তা হলে
প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে পেতে আপনার জীবন-নদীতে অনেক জল গড়িয়ে যাবে
এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত করার আন্দোলনে আপনিও
শামিল হবেন!
আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার সবচেয়ে
সহজ ও কার্যকর কৌশল কোনটি? আমি উত্তর দিব, অন্তত চার-পাঁচজন বিসিএস
কর্মকর্তার লিখিত পরামর্শ গ্রহণ করা। হ্যাঁ, আপনাকে বিসিএস প্রিলিমিনারি,
লিখিত, ভাইভা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ফরম পূরণ ও ক্যাডার
চয়েজের কৌশলের উপর বিভিন্ন ক্যাডারের বিভিন্ন একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের
চার-পাঁচজন কর্মকর্তার লিখিত পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
Sunday, December 29, 2019
Home
BCS Preparation tips
Preparation tips
চাকরির পরীক্ষা
চাকরির প্রস্তুতি
প্রশ্ন
সাধারণ জ্ঞান
৩টি শর্ত পূরণ করতে পারলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন। BCS Preparation tips
৩টি শর্ত পূরণ করতে পারলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন। BCS Preparation tips
Tags
# BCS Preparation tips
# Preparation tips
# চাকরির পরীক্ষা
# চাকরির প্রস্তুতি
# প্রশ্ন
# সাধারণ জ্ঞান
Share This
About Elite Career BD
সাধারণ জ্ঞান
Labels:
BCS Preparation tips,
Preparation tips,
চাকরির পরীক্ষা,
চাকরির প্রস্তুতি,
প্রশ্ন,
সাধারণ জ্ঞান
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Author Details
Welcome to Elite Career BD. EliteCareerBD.com is a new-generation multimedia education,result,Job, news portal from Bangladesh,publishes update Job Circular,tech news,result news,Education materials from a highly interactive platform.
No comments:
Post a Comment